Wellcome to National Portal
সাধারণ বীমা কর্পোরেশন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

প্রাক-রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা

 

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ বাংলাদেশে রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা প্রদানের একমাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান ‘নো প্রফিট নো লস’ ভিত্তিতে রপ্তানী বৃদ্ধির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে ব্যাংক প্রদত্ত রপ্তানী ঋণ ও রপ্তানীকারক কর্তৃক বাকীতে রপ্তানীকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধজনিত ঝুঁকি কভার করার জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

 

উদ্দেশ্য

রপ্তানীর উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয়, দ্রব্য-সামগ্রী প্রস্তুত ও পক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন খরচ মেটানো এবং ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার জন্য রপ্তানীকারকদের, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারী রপ্তনীকারকগণ যারা কোল্যাটারাল দিতে অক্ষম তারা যাতে ব্যাংক থেকে এ ঋণ সহজে ও উদার শর্তে পেতে পারেন সে জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ ঋণ দাতা ব্যাংকের জন্য প্রাক-রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা (প্রি-শিপমেন্ট ফাইন্যান্স গ্যারান্টি) প্রবর্তন করেছে। এ গ্যারান্টি ব্যাংকের নামে প্রতিটি রপ্তানীকারকের হিসেবে পৃথকভাবে ইস্যু করা হয়।

 

ঋণ গ্রহনকারী রপ্তানীকারক ঋণের টাকা সময়মত পরিশোধ না করলে ব্যাংকের যে ক্ষতি হয় তার একটি বৃহত্তর অংশ ক্ষতিপূরনের নিশ্চয়তা দিয়ে রপ্তানীকারকদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানে ব্যাংককে উৎসাহিত করা এ গ্যারান্টির লক্ষ্য। এ গ্যারান্টি তাই নতুন রপ্তানীকারকদের আরো উদারভাবে ঋণ দিতে এবং বর্তমান রপ্তানীকারকদের আরো বেশী পরিমানে ঋণ মঞ্জুর করতে ব্যাংকারদের উৎসাহিত করবে। বিদেশী ক্রেতার সঙ্গে সম্পাদিত পাকাপাকি বিক্রয় চুক্তি (Confirmed Contract) অথবা অমোচনীয় রপ্তানী ঋণ পত্রের (Irrevocable L/C) বিপরীতে এবং কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে চুক্তি কিংবা ঋণপত্র ছাড়াই রপ্তানীর উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয়, তৈরী, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকিং এবং পরিবহনের কাজে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সমুদয় অগ্রীম এবং/অথবা ঋণের অর্থাৎ প্যাকিং ক্রেডিট, ক্যাশ ক্রেডিট এবং ব্যাক টু ব্যাক এলসির ঝুঁকি আবরণ করার জন্য এ গ্যারান্টি নেয়া যাবে।

 

আবরিত ঝুঁকি

ক) রপ্তানীকারক দেউলিয়া হয়ে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হলে,

অথবা

খ) রপ্তানীকারক ডিফল্টার হলে অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখের ৪(চার) মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে, ঋণদাতা ব্যাংক বা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের যে আর্থিক ক্ষতি হবে এ গ্যারান্টির আওতায় তার একটি বৃহত্তর অংশ পূরণের নিশ্চয়তা দেয়া হয়।

 

গ্যারান্টিত ঋণ পরিশোধ বলতে রপ্তানীকারক কর্তৃক ঋণদাতা ব্যাংক অথবা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে সংশ্লিষ্ট শিপিং ডকুমেন্টস নির্দিষ্ট তারিখে জমা দেয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। এ গ্যারান্টির আওতায় নিম্নবর্ণিত অবস্থায় একজন রপ্তানীকারককে ডিফল্টার হিসেবে গণ্য করা যায়ঃ-

ক) ব্যাংক কর্তৃক ঋণ পরিশোধের চূড়ান্ত নোটিশ ইস্যুর তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে রপ্তানীকারক কর্তৃক মেয়াদ উত্তীর্ণ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা,

খ) উক্ত রপ্তানীকারককে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক পুনরায় ঋণ প্রদানে অস্বীকৃতি এবং

গ) খেলাপী ঋণ গ্রহীতার নিকট থেকে ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। 

 

গ্যারান্টি গ্রহনের প্রক্রিয়া

ক) ব্যাংককে প্রত্যেক রপ্তানীকারকের জন্য পৃথকভাবে ২০০ টাকা ফি সহ প্রস্তাবপত্র যথাযথভাবে পূরণ এবং ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষর করতঃ দাখিল করতে হবে। (এ উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট প্রস্থাবপত্র ইসিজি বিভাগ কর্তৃক সকল বাণিজ্যিক ব্যাংককে সরবরাহ করা হয়) উক্ত প্রস্তাবপত্রে ব্যাংক কর্তৃক রপ্তানীকারক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হয়।

খ) ব্যাংকের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য ইসিজি বিভাগ প্রয়োজনবোধে রপ্তানীকারকের অফিস, কারখানা এবং গোডাউন পরিদর্শন করতে পারবে এবং এ জন্য ব্যাংক ও রপ্তানীকারক প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে।

গ) দাখিলকৃত প্রস্তাবটি এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ এর নিকট গ্রহণযোগ্য হলে প্রাক-রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা (প্রি-শিপমেন্ট ফাইন্যান্স গ্যারান্টি) ইস্যু করা হয়।

ঘ) প্রি-শিপমেন্ট ফাইন্যান্স গ্যারান্টি (প্রাক-রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা) সাধারণতঃ এক বৎসর মেয়াদের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নামে ইস্যু করা হয়ে থাকে। গ্যারান্টি মেয়াদে মঞ্জুরকৃত ঋণের সীমা  (Credit Limit) ঘুর্ণায়মান চক্র (Revolving) হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ রপ্তানী দলিল পেশের মাধ্যমে ঋণ সমন্বয়ের পর পরই ঋণের সীমা আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে। এ গ্যারান্টি এবং এ প্রসঙ্গে দাখিলকৃত প্রস্তাবপত্র একত্রে এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ এবং প্রস্তাবকারী ব্যাংকের মধ্যে ঋণের গ্যারান্টির একটি আইন সংগত চুক্তিপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রস্তাবপত্র এবং গ্যারান্টিতে ঋণ নিশ্চয়তা কার্জকরী হওয়ার শর্তসমূহ উল্লেখ রয়েছে।

 

প্রিমিয়াম

এ গ্যারান্টিতে প্রিমিয়ামের হার প্রতি একশ টাকার জন্য প্রতি মাসে ১০ পয়সা মাত্র। অনুমোদিত ক্রেডিট লিমিট যাই থাকুক না কেন প্রতি মাসের যে কোন দিনে রপ্তানীকারকের নামে সর্বোচ্চ যে ঋণ ব্যাংকের পাওনা থাকে তার অপর এ হার প্রয়োগ করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়।

 

দাবীর প্রাথমিক নোটিশ

গ্যারান্টির আওতায় দাবীর সম্ভাবনা দেখা দিলে অথবা রপ্তানীকারক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণদাতা ব্যাংকের নিকট শিপিং ডকুমেন্টস জমা দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক কর্তৃক ২০ (বিশ) দিনের মধ্যে অবশ্যই ইসিজি বিভাগের নিকট দাবীর প্রাথমিক নোটিশ দিতে হবে এবং ক্ষতি হ্রাসের ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

ক্ষতিপূরণের আনুপাতিক হার

রপ্তানীকারক ঋণদাতা ব্যাংকের কাছে যথাসময়ে রপ্তানীসংক্রান্ত দলিল পত্র জমা না দিলে এ গ্যারান্টির আওতায় ব্যাংককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। রপ্তানীকারকের কাছ থেকে ঋণ বাবদ যে টাকা পাওনা থাকবে এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ এর ক্ষতিপূরণ দানের অংশ হবে সে পাওনা শতকরা ৭৫ ভাগ, তবে ক্ষতিপূরণের অংক কোন অবস্থাতেই গ্যারান্টিতে উল্লেখিত সর্বোচ্চ দায়ের (Maximum Liability) সীমা অতিক্রম করবে না।  

 

দাবী নিষ্পত্তির সময়সীমা

ক) ঋণ গ্রহীত দেউলিয়া হয়ে গেলে তার দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হওয়ার পর এবং/অথবা

খ) ঋণ গ্রহণকারী সময় মতো ঋণ পরিশোধ না করলে সে ঋণ পরিশোধের জন্য নিদিষ্ট তারিখের ৪ (চার) মাস পরে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ করা হবে।

গ) কিছু শর্ত পূরণ স্বাপেক্ষে রপ্তানীকারকের হিসাবে ওভারডিউ পর্যায়েও দাবী পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের অবহেলার কারণে ঋণ সমন্বিত না হলে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

 

দাবী সম্পর্কিত কমিটি

অর্থ মন্ত্রনালয় কর্তৃক গঠিত দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ইসিজির দাবী নিষ্পত্তি করে থাকে। ইসিজি বিভাগ শুধুমাত্র দাবী সম্পর্কীয় কাগজপত্র প্রসেস করে। উক্ত কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, এফবিসিসিআই, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি রয়েছে।

 

পরিশোধিত দাবীর বিপরীতে পুনঃপ্রাপ্তি

দাবী নিষ্পত্তির পর খেলাপী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাংক কর্তৃক সর্বাত্মক পদক্ষেপ (প্রয়োজন বোধে আইনগত ব্যবস্থাসহ) গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায়ের খরচ বাদ দেয়ার পরে আদায়কৃত টাকার শতকরা ৭৫ ভাগ ইসিজি বিভাগে ফেরত দিতে হবে।

 

ওভারডিউ পর্যায়ে পরিশোধিত দাবীর ক্ষেত্রে

ওভারডিউ পর্যায়ে পরিশোধিত দাবীর ক্ষেত্রে রপ্তানীকারকের পরবর্তী রপ্তানী বিল হতে ৫% হারে কর্তন করে অবশ্যই ইসিজি বিভাগে ফেরত দিতে হবে।

 

ব্যাংকের করণীয় কাজ

প্রাক-রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা চুক্তি চালু রাখার স্বার্থে ব্যাংকের নিম্নলিখিত কর্তব্যসমূহ পালন করা আবশ্যকঃ

ক) প্রতি মাসে নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত রপ্তানীকারকের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ এবং সমন্বিত ঋণের বিররণ তারিখ অনুযায়ী একটি ঘোষনাপত্রে লিপিবদ্ধ করে (নির্দিষ্ট ছকে) প্রিমিয়ামসহ পরবর্তী মাসের ১০ তারিখে অথবা পূর্বে অবশ্যই এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগের কাছে দাখিল করতে হবে।

খ) ঋণ মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে ব্যাংক তার স্বাভাবিক নিয়মকানুন অবশ্যই মেনে চলবে এবং নিয়মিত প্রদত্ত ঋণের তত্ত¡াবধান করবে।

গ) এক্সপোর্ট ক্রেডিট বিভাগের অনুমোদন ছাড়া প্রদত্ত প্রাক-রপ্তানী ঋণের কোন শর্ত পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা শিথিল করা যাবে না।

ঘ) গ্যারান্টির আওতায় ব্যাংকের কোন ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিলে তা ২০ দিনের মধ্যে ইসিজি বিভাগকে লিখিতভাবে জানাতে হবে এবং ক্ষতির পরিমান হ্রাসের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঙ) গ্যারান্টি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও গ্যারান্টির আওতায় প্রদত্ত ঋণের ঝুঁকি আবরিত থাকে বিধায় উক্ত ঋণ পরিশোধের তারিখ পর্যন্ত মাসিক ঘোষনাপত্র ও প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে।

 

বিশেষ দ্রষ্টব্য

  • প্রিমিয়াম এবং প্রস্তাব ফি’র জন্য নগদ টাকা গ্রহণ করা হয় না। সকল টাকা ইসিজি বিভাগের অনুকূলে পে-অর্ডার/ডিডি’র মাধ্যমে প্রেরণ করতে হবে।
  • ব্যাংক কর্তৃক গ্যারান্টির শর্ত ভঙ্গ করা হলে, যেমন সময়মত মাসিক ঘোষনাপত্র ও প্রিমিয়াম জমা দেয়া না হলে, গ্যারান্টির আওতায় ইসিজি’র কোন দায় থাকবে না।
  • অগ্নি, নৌ, দুর্ঘটনা ইত্যাদি বাণিজ্যিক বীমাসমূহের আওতাভুক্ত ক্ষতিসমূহ এ গ্যারান্টির আওতায় পড়বে না।
  • গ্যারান্টি কার্যকরী হওয়ার পূর্বে এবং গ্যারান্টির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে ব্যাংক প্রদত্ত ঋণের কোন ঝুঁকি এ গ্যারান্টির আওতায় পড়বে না।
  • গ্যারান্টির আওতায় ঝুঁকি নির্ণয়ে সহায়ক এমন কোন তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রদান করলে দাবী সরাসরি নাকচ হয়ে যাবে, এমনকি দাবী পরিশোধের পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরিশোধিত অর্থ উক্ত কারনে ইসিজি বিভাগকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।