পোষ্ট শিপমেন্ট এক্সপোর্ট ফাইন্যান্স গ্যারান্টি ঋণদাতা ব্যাংকের নামে ইস্যু করা হয়। পোষ্ট শিপমেন্ট ফাইন্যান্স গ্যারান্টি এমনভাবে প্রণীত হয়েছে যা বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহকে রপ্তানী বিল বাট্টাকরণ, বিল ক্রয়, বিল নেগোশিয়েসন কিংবা রপ্তানীকারককে রপ্তানী-উত্তর অগ্রীম প্রদান হতে উদ্ভুত ঝুঁকির নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। এ গ্যারান্টি রপ্তানী-উত্তর পর্যায়ে রপ্তানীকারকদের আরো উদারভাবে ঋণ দিতে ব্যাংকারদের উৎসাহিত করে।
রপ্তানীকারকগণ সাধারণতঃ তখনই রপ্তানী-উত্তর ঋণ সমন্বয় করতে ব্যর্থ হন যখন বিদেশী ক্রেতা বাকীতে রপ্তানীকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হন। এ অবস্থায় ব্যাংক সমূহ রপ্তানী-উত্তর পর্যায়ে প্রদত্ত ঋণ আদায় করতে সক্ষম হয় না, যদি না রপ্তানীকারকগণ তাদের নিজস্ব তহবিল হতে ঋণ সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ হতে রপ্তানী-উত্তর ঋণের জন্য যে গ্যারান্টি ইস্যু করা হয় সে গ্যারান্টির আওতায় উক্ত রপ্তানী-উত্তর ঋণ সমন্বিত না হলে উদ্ভুত ক্ষতির একটি বড় অংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এ জন্যই এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ এর রপ্তানী-উত্তর ঋণ নিশ্চয়তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের সরবরাহকৃত রপ্তানী-উত্তর ঋণের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
উদ্দেশ্য
রপ্তানী কার্যক্রম চালু রাখার নিমিত্তে চলতি মূলধনের স্বল্পতা দূরীকরণের জন্য রপ্তানীকারকগণ রপ্তানী-উত্তর পর্যায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ হতে আর্থিক সহায়তা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহের রপ্তানী-উত্তর ঋণ সহায়তা ছাড়া ছোট ছোট রপ্তানীকারকদের পক্ষে বিদেশী ক্রেতার নিকট বাকীতে পণ্য রপ্তানী করা কিংবা একটি রপ্তানী ফরমায়েশ এর বিপরীতে পণ্য রপ্তানীর পরে অন্য আরেকটি রপ্তানী চুক্তি/এলসি’র বিপরীতে পণ্য রপ্তানী করা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে রপ্তানীকারককে অবশ্যই পূর্বের রপ্তানীর মূল্য না আসার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ অবস্থায় রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা(রপ্তানী-উত্তর) একদিকে যেমন রপ্তানীকারকদেরকে রপ্তীর পরেও নিশ্চয়তা প্রদানের মাধ্যমে আবার ঋণ পেতে সহায়তা করে, অন্য দিকে রপ্তানী-উত্তর পর্যায়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক সমূহ রপ্তানীকারককে যে অগ্রীম প্রদান করে তা ফেরৎ পাওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে উদারভাবে রপ্তানী-উত্তর ঋণ প্রদানে ব্যাংককে উৎসাহিত করে থাকে।
গ্যারান্টির আওতা
গ্যারান্টি মেয়াদে রপ্তানী বিল নেগোসিয়েট, ক্রয়, ডিসকাউন্ট এর মাধ্যমে অথবা রপ্তানী বিলের বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ/অগ্রিমের ঝুঁকি কভার করা হয়।
গ্যারান্টি গ্রহণের প্রক্রিয়া
ক) ব্যাংককে প্রত্যেক রপ্তানীকারকদের জন্য পৃথকভাবে ২০০ টাকা ফি সহ প্রস্তাবপত্র যথাযথভাবে পূরণ এবং ক্ষমতা প্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক স্বাক্ষর করতঃ দাখিল করতে হবে। (এই উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট প্রস্তাবপত্র সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরবরাহ করা হয়)।
খ) এই প্রস্তাবপত্রে রপ্তানীকারক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হয়। রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা (রপ্তানী-উত্তর) সাধারণতঃ এক বৎসর মেয়াদের জন্য ইস্যু করা হয়ে থাকে।
গ) গ্যারান্টির আওতায় মঞ্জুরকৃত ঋণের সীমা (Credit Limit) ঘুর্ণায়মান চক্র(রিভলভিং) হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ ঋণ সমন্বয়ের পর পরই ঋণের সীমা আবার পূর্ব অবস্থায় ফিরে আসে।
ঘ) দাখিলকৃত প্রস্তাবটি এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগের নিকট গ্রহণযোগ্য হলে রপ্তানী-উত্তর ঋণ নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) ইস্যু করা হয়। এ গ্যারান্টি এবং এ প্রসঙ্গে দাখিলকৃত প্রস্তাবপত্র একত্রে এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ এবং প্রস্তাবকারী ব্যাংক এর মধ্যে ঋণ গ্যারান্টি একটি আইন সংগত চুক্তিপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। গ্যারান্টি এবং প্রস্তাবপত্রে ঋণ নিশ্চয়তা কার্যকরী হওয়ার শর্ত সমূহের উল্লেখ রয়েছে।
ঙ) রপ্তানী চুক্তির (Contract) বিপরীতে ব্যাংক প্রদত্ত রপ্তানী-উত্তর ঋণের ঝুঁকি আবরণ করার জন্য ব্যাংক যদি পোষ্ট-শিপমেন্ট গ্যারান্টি নিতে আগ্রহী হন তবে সে ক্ষেত্রে উক্ত গ্যারান্টির প্রস্তাব বিবেচনার পূর্বে রপ্তানীকারককে অবশ্যই এক্সপোর্ট পেমেন্ট রিক্স পলিসি(কমপ্রিহেনসিভ গ্যারান্টি) নিতে হবে।
আবরিত ঝুঁকি
নিম্ন লিখিত কারণে যদি রপ্তানীকারক রপ্তানী-উত্তর ঋণ সমন্বয়ে ব্যর্থ হয় তবে ব্যাংকের প্রকৃত ক্ষতি নির্ধারণ পূর্বক ক্ষতি পূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়ঃ
ক) রপ্তানীকারক দেউলিয়া হয়ে ঋণ পরিশোধে অপারগ হলে, বা
খ) রপ্তানীকারক যথাসময়ে ঋণ সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের অবহেলার কারণে ঋণ সমন্বিত না হলে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না।
প্রিমিয়াম
মাসের যে কোন দিনের সর্বোচ্চ বকেয়ার উপর শতকরা ০.০৫ টাকা হারে প্রতি মাসে ঘোষনাপত্রের সাথে প্রদান করতে হবে।
দাবী নিষ্পত্তির সময়সীমা
ক) যদি রপ্তানীকারক দেউলিয়া হয় তবে দেউলিয়া ঘোষনার ১ মাস পরে অথবা ঋণ পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখের ৪ মাস পরে তুলনামূলকভাবে যেটি আগে।
খ) যদি রপ্তানীকারক যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ না করেন তবে ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট তারিখের ৪ মাস পরে ব্যাংকের ক্ষতিপূরণ করা হবে।
গ) কিছু শর্ত পূরণ স্বাপেক্ষে রপ্তানীকারকের হিসাবে ওভারডিউ পর্যায়েও দাবী পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।
ক্ষতিপূরণের আনুপাতিক হার
রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা (রপ্তানী-উত্তর) এর আওতায় সাধারণতঃ মোট ক্ষতির সর্বোচ্চ শতকরা ৭৫ ভাগ ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় এবং বাকী শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষতি ব্যাংককে বহন করতে হয়। তবে ক্ষতি পূরণের অংশ কোন অবস্থাতেই পলিসিতে উল্লেখিত সর্বোচ্চ দায়ের সীমা অতিক্রম করবে না।
দাবীর প্রাথমিক নোটিশ
ক্ষতি সংগঠিত হওয়ার পরপরই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইসিজি বিভাগে দাবীর প্রাথমিক নোটিশ দিতে হবে।
দাবী সম্পর্কিত কমিটি
অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত দশ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ইসিজির দাবী নিষ্পত্তি করে থাকে। ইসিজি বিভাগ শুধুমাত্র দাবী সম্পর্কীয় কাগজপত্র প্রসেস করে। উক্ত কমিটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এফবিসিসিআই, বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি রয়েছেন।
পরিশোধিত দাবীর বিপরীতে পুনঃপ্রাপ্তি
দাবী নিষ্পত্তির পর খেলাপী ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাংক কর্তৃক সর্বাত্মক পদক্ষেপ (প্রয়োজন বোধে আইনগত ব্যবস্থাসহ) গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায়ের খরচ বাদ দেয়ার পরে আদায়কৃত টাকার শতকরা ৭৫ ভাগ ইসিজি বিভাগে ফেরত দিতে হবে।
ওভারডিউ পর্যায়ে পরিশোধিত দাবীর ক্ষেত্রে
ওভারডিউ পর্যায়ে পরিশোধিত দাবীর ক্ষেত্রে রপ্তানীকারকের পরবর্তী রপ্তানী বিল হতে ৫% তারে কর্তন করে অবশ্যই ইসিজি বিভাগে ফেরত দিতে হবে।
বাংকের করনীয় কাজসমূহ
রপ্তানী ঋণ নিশ্চয়তা(রপ্তানী-উত্তর) চালু রাখার স্বার্থে ব্যাংকের নি¤œ লিখিত কর্তব্যসমূহ পালন করা আবশ্যকঃ
ক) প্রতি মাসে নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত রপ্তানীকারকের অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ এবং সমন্বিত ঋণের বিবরণ তারিখ অনুযায়ী একটি ঘোষনাপত্রে (নির্দিষ্ট ছকে) লিপিবদ্ধ করে প্রিমিয়াম সহ পরবর্তী মাসের ১০ তারিখে অথবা পূর্বে অবশ্যই এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগ-এর কাছে দাখিল করতে হবে।
খ) ঋণ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ব্যাংক তার স্বাভাবিক নিয়মকানুন অবশ্যই মেনে চলবে এবং নিয়মিত প্রদত্ত ঋণের তত্ত¡বধান করবে।
গ) এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি বিভাগের অনুমোদন ছাড়া প্রদত্ত রপ্তানী-উত্তর ঋণের কোন শর্ত পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা শিথিল করা যাবে না।
ঘ) যদি উক্ত হিসাবে কোন রকম অনিয়ম দেখা দেয় তবে তা সঙ্গে সঙ্গে ইসিজি বিভাগকে জানাতে হবে এবং ক্ষতির পরিমান হ্রাসের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঙ) দাবীর টাকা পরিশোধের পরে ক্ষতির অর্থ পুণরুদ্ধারের সম্ভাব্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ক্ষতির অর্থ পুণরুদ্ধার সম্ভব হলে আদায়ের খরচ বাদ দেয়ার পরে তিন চতুর্থাংশ টাকা অত্র বিভাগে ফেরৎ দিতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য